জরিমানার টাকা শোধে মোটরসাইকেল নিয়ে আবারও রাস্তায়

Passenger Voice    |    ০১:৫৯ পিএম, ২০২১-০৭-৩১


জরিমানার টাকা শোধে মোটরসাইকেল নিয়ে আবারও রাস্তায়

রাজধানীর আজিমপুর ছাপড়া মসজিদের গলি থেকে বাসস্ট্যান্ডের দিকে উঁকি দিচ্ছেন শহিদুল ইসলাম। কারণ চলমান কঠোর লকডাউনে বাসস্ট্যান্ডের চৌরাস্তায় নিয়মিত বসে পুলিশের তল্লাশি চৌকি; থাকে কড়া নজরদারি। উদ্দেশ্য, মূল সড়কে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে কোনোক্রমে মোটরসাইকেল নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া।

লকডাউনে নিধেষাজ্ঞা উপেক্ষা করেই শহিদুলকে মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তায় নামতে হচ্ছে। লকডাউনের সড়কেও সকাল-সন্ধ্যা যাত্রী খুঁজতে হচ্ছে। সংসারের হেলে পড়া হাল কোনোক্রমে ধরে রাখতে আপাতত এটাই তাঁর সামনে একমাত্র পথ। কিন্তু রাস্তায় নেমেই সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশি বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। লকডাউনে নিয়ম ভেঙে রাস্তায় নামায় বৃহস্পতিবার ভ্রাম্যমাণ আদালত তাঁকে দুই হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। এবার ধরা পড়লে জরিমানা গুনতে হবে দ্বিগুণ। তাই বাড়তি সতর্কতা।

গতকাল শুক্রবার সকালের দিকেই আজিমপুর এলাকায় কথা হয় শহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দুই হাজার টাকার মামলা খাইছি। অথচ তখন পকেটে ছিল ৬০ টাকা। মামলার দুই হাজার টাকা দিতে পারলে কি বাইক নিয়ে যাত্রী খুঁজতাম? আজকে (শুক্রবার) যাত্রী কম পাব জেনেও বের হইছি। এখন সংসার খরচের সঙ্গে মামলার টাকাটাও জোগাড় করতে হবে।’

ঝুম বৃষ্টি মাথায় নিয়েই গতকাল দুপুরে রিকশা ভ্যানে করে গাবতলীর পথে যাচ্ছিলেন জামাল ও তাঁর পরিবার। গন্তব্য মানিকগঞ্জ। তবে আপাতত আমিনবাজার পর্যন্ত যাওয়ার চেষ্টা তাঁদের। তার পর সেখান থেকে একটা উপায় হয়ে যাবে বলে আশা করছেন জামাল।

কলাবাগান এলাকায় কথা হয় জামালের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘শুনতাছি এই লকডাউন নাকি আরো বাড়বে। ঢাকায় থেকে করব কী। ঘর থেকেও বের হওয়া যায় না। গ্রামে খোলা জায়গা আছে, বাড়ির মানুষজন আছে। দিন কেটে যাবে।’ কিভাবে মানিকগঞ্জ যাবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনো জানি না। ব্যবস্থা একটা হয়ে যাবে। আপাতত গাবতলী পর্যন্ত যাব। সেখান থেকে হেঁটেই আমিনবাজার যেতে হবে। তারপর আল্লাহ একটা ব্যবস্থা করে দিবেন।’

এদিকে চলমান বিধি-নিষেধের অষ্টম দিনে গতকাল রাজধানীতে তুলনামূলক যান চলাচল কম ছিল। অবশ্য সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে বৃষ্টিমুখর দিন হওয়ায় মানুষজনও খুব একটা ঘরের বাইরে আসেনি। সকালের দিকে কিছু ব্যক্তিগত গাড়ি আর রিকশার চলাচল থাকলেও দুপুরে সড়ক প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়। মূল সড়কগুলোতে জরুরি প্রয়োজনের কিছু গাড়ি ছাড়া তেমন কোনো যানবাহন দেখা যায়নি। গতকাল সকালের দিকে পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে কিছুটা কড়াকড়ি থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাতে ঢিলেঢালা ভাব দেখা যায়।

সকালে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘চার ঘণ্টা ধরে এখানে ডিউটি দিচ্ছি। এখনো কোনো জরিমানা করা হয়নি। আজ ছুটির দিন হওয়ায় রাস্তায় গাড়ির তেমন চাপ নেই। তবে ব্যক্তিগত গাড়ি যেগুলো যাচ্ছে, থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছি।’

অবশ্য পুরান ঢাকার লালবাগ, কেল্লারমোড়, বকশীবাজার ও পলাশীর অলিগলিতে মানুষ, ব্যক্তিগত গাড়ি ও রিকশা তুলনামূলক বেশি দেখা গেছে। ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুর, জিগাতলা ও সাতমসজিদ রোড এলাকায়ও মানুষের আনাগোনা ছিল চোখে পড়ার মতো।

হাজারীবাগের ট্যানারি মোড়ে কিছু দোকান খোলা থাকতে দেখা যায়। এসব দোকানে চামড়ার তৈরি নানা জিনিস বিক্রি হয়। এক দোকানের মালিক লোকমান বলেন, ‘সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বিশেষ করে বিকেলের দিকে কিছু কাস্টমার আসে। সে জন্য দোকান খুলছি। তা ছাড়া এভাবে টানা দীর্ঘদিন দোকান বন্ধ রেখে তো আর চলা যায় না। তবে পুলিশের গাড়ি আসে কি না সেদিকেও চোখ রাখতে হয়।’

৩৮১ জন গ্রেপ্তার, জরিমানা : লকডাউনে বিধি-নিষেধ না মেনে ‘বিনা কারণে’ রাস্তায় চলাফেরা করায় গতকাল রাজধানীতে ৩৮১ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালত ১০৮ জনকে ৬৭ হাজার ৯৪০ টাকা জরিমানা করে। আর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ ৩২১টি গাড়িকে আট লাখ ১৭ হাজার টাকা জরিমানা করে।

র‌্যাব জানায়, সরকারের জারি করা বিধি-নিষেধ কার্যকর ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে দেশব্যাপী মাঠে তৎপর রয়েছে তারা। বিধি-নিষেধ কার্যকর করতে গতকালও র‌্যাবের নিয়মিত টহল ও চেকপোস্টের পাশাপাশি ছিল অতিরিক্ত টহল ও চেকপোস্ট। এদিন সারা দেশে র‌্যাবের ১৮০টি টহল এবং ১৮৪টি চেকপোস্ট পরিচালনা করা হয়। সারা দেশে র‌্যাবের ২৫টি ভ্রাম্যমাণ আদালত ১৪৭ জনকে এক লাখ ১১ হাজার টাকা জরিমানা করে।